প্রচন্ড গরমে, এসিটা চালু করার পর যখন দেখেন গরম রুম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, তখন নিশ্চই মনে প্রশ্ন আসে, এসি কিভাবে কাজ করে?
নিজেদের বাসায় এসি নেওয়ার কথা ভাবলেও অনেকেই জানিনা এসি কিভাবে কাজ করে, এসির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সম্পর্কে এবং কোন ধরনের এসি আমাদের জন্য উপযুক্ত। তাই এই সকল প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়েই আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
এই লেখাটি পড়ার পর আশা করি, এসি নিয়ে আপনার অনেক সন্দেহ দূর হবে এবং অজানা রহস্য উন্মোচিত হবে।
এসি কিভাবে কাজ করে
এসি, বা এয়ার কন্ডিশনার, একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। এসির কার্যপদ্ধতি কয়েকটি ধাপে বিভক্ত:
- এসিতে দুটি প্রধান অংশ থাকে: ইভাপোরেটর (Evaporator) এবং কনডেনসার (Condenser)। ইভাপোরেটর ঘরের ভেতরের অংশে থাকে এবং কনডেনসার বাইরে থাকে।
- ইভাপোরেটর কয়েল ঘরের গরম বাতাসকে শোষণ করে এবং সেটি ঠান্ডা করে। কনডেনসার কয়েল বাহিরের তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রা রাখে এবং গরম বাতাসকে বাইরে বের করে দেয়।
- এই প্রক্রিয়ায়, গরম বাতাস ক্রমাগত বাইরে চলে যায় এবং ঠান্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করে।
এসির ইতিহাস ও আবিষ্কারক
এয়ার কন্ডিশনারের আবিষ্কারক উইলিস ক্যারিয়ার ১৯০২ সালে প্রথম কার্যকর এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেম উদ্ভাবন করেন। ক্যারিয়ার জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৬ সালে নিউইয়র্কের অ্যাঙ্গোলা শহরে।
একটি মুদ্রণ কোম্পানির জন্য আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এয়ার কন্ডিশনার তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর থেকে এয়ার কন্ডিশনার প্রযুক্তির উন্নয়ন হতে থাকে এবং মানুষের জীবন যাপনের মান উন্নত করে।
এসির বিভিন্ন অংশ
একটি এসি বেশ কয়েকটি যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি হয় এবং কাজ করে থাকে। এসির বিভিন্ন উপাদান গুলো হল:
১. থার্মোস্ট্যাট
থার্মোস্ট্যাট এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মূল যন্ত্রাংশ। এটি ঘরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে এবং এসিকে চালু বা বন্ধ করার সংকেত দেয়।
২. রেফ্রিজারেন্ট
রেফ্রিজারেন্ট এসির মূল কার্যপ্রণালী সম্পন্ন করে। এটি গরম বাতাসকে শোষণ করে এবং ঠান্ডা করে। এই যন্ত্রাংশ ছাড়া এসি কার্যকর হতে পারে না।
৩. কম্প্রেসার
কম্প্রেসার এসির কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ইভাপোরেটর কয়েলের প্রেসার বাড়িয়ে গরম বাতাস শোষণ করে এবং তা কনডেনসারের মাধ্যমে বাইরে বের করে।
৪. ইভাপোরেটর কয়েল
ইভাপোরেটর কয়েল ঘরের গরম বাতাস শোষণ করে এবং তা ঠান্ডা করে কনডেনসারের দিকে পাঠায়।
৫. কনডেনসার কয়েল
কনডেনসার কয়েল গরম বাতাসকে লিকুইডে পরিণত করে এবং তা বাইরে বের করে দেয়।
৬. এক্সপেনশন বাল্ব
এক্সপেনশন বাল্ব রেফ্রিজারেন্টকে গ্যাসে রূপান্তর করে এবং তা পুনরায় ইভাপোরেটর কয়েলের মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করায়।
ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসি
এসি দুই ধরনের হতে পারে: ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার।
ইনভার্টার এসি
ইনভার্টার এসি ঘরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখে। এই এসি তাপমাত্রা পৌঁছানোর পর কম্প্রেসার বন্ধ না করে ধীরে ধীরে চলে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখে।
নন-ইনভার্টার এসি
নন-ইনভার্টার এসিতে কম্প্রেসার নিজে থেকেই বন্ধ এবং চালু হয়। ঘরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পর কম্প্রেসার বন্ধ হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বাড়লে পুনরায় চালু হয়।
এসির প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের এসি পাওয়া যায়। আমরা সচরাচর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি নিম্নোক্ত ধরনের এসি গুলো:
স্প্লিট টাইপ এসি (split type AC)
এই ধরনের এসি ইনডোর এবং আউটডোর দুটি অংশে বিভক্ত থাকে। ইনডোর অংশে থাকে ইভাপোরেটর, ব্লোয়ার ফ্যান এবং আউটডোর অংশে থাকে কম্প্রেসার, কনডেনসার।
উইন্ডো টাইপ এসি (window type AC)
এই এসির সকল অংশ একটি কেসিং এর মধ্যে একসাথে আবদ্ধ থাকে। এটি জানালা সমান উচ্চতায় স্থাপন করে ব্যবহার করা হয় বলে একে উইন্ডো টাইপ এসি বলা হয়।
প্যাকেজ টাইপ এসি (package type AC)
এই এসির ক্যাপাসিটি প্রায় ৫ থেকে ২০ টন। এসির সকল অংশ কেসিং এর মধ্যে আবদ্ধ থাকে। এর সবকিছু একত্রিত থাকার কারণে একে প্যাকেজ টাইপ এসি বলা হয়।
সেন্ট্রাল এসি (Central AC)
এই ধরনের এসি একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে একই সাথে কয়েকটি রুমের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাইপ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি কক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়া প্রেরণ করা হয়। একে সেন্ট্রাল এসি বলা হয়।
এসি ব্যবহারের নিয়মাবলী
১. টেম্পারেচার সেট করুন: এসির রিমোটের সাহায্যে ঘরের টেম্পারেচার সেট করুন। গরমের সময় ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচার রাখতে পারেন।
২. পাখা ব্যবহার করুন: এসি চলার সময় ঘরের পাখা চালিয়ে রাখতে পারেন, এতে ঠান্ডা বাতাস আরও ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন: এসি চালু থাকলে ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন, যাতে ঠান্ডা বাতাস বাইরে চলে না যায়।
৪. নিয়মিত পরিষ্কার করুন: এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এতে এসির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
এসির মাধ্যমে আমরা প্রচন্ড গরমে স্বস্তি পেয়ে থাকি। এই যন্ত্রটি আবিষ্কার ও এর কার্যপ্রণালী আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও আরামদায়ক করেছে। এসির বিভিন্ন অংশ ও এর কার্যপদ্ধতি বুঝে ব্যবহার করলে আমরা এর থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারি। এসি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম মেনে চললে এর কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব দুটোই বাড়ে।
আরো পড়ুন