খাবারের স্বাদ বাড়াতে গোলমরিচের জুড়ি নেই। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। গোলমরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন গোলমরিচ খাওয়া যেতে পারে। গোলমরিচ খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে উপকার আরও বেশি হবে।

 

গোলমরিচের অসাধারণ উপকারিতা
গোলমরিচের অসাধারণ উপকারিতা

 

যেমন-

হলুদ ও গোলমরিচ: হলুদের সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। অনেকে গোলমরিচের সঙ্গে দুধও খেতে পারেন। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, এবং ক্যারোটিনয়েড থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরকে ফিট রাখে।

 

চা ও গোলমরিচের গুঁড়ো: অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে গোলমরিচ সহায়ক হতে পারে। গোলমরিচ গুঁড়ো করে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খান, এতে বাতের ব্যথা কমবে। গোলমরিচে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যেকোনো ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

 

গোলমরিচ ও লবণ: গোলমরিচ হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এক চামচ গোলমরিচের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন, বিশেষত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়।

 

বিট লবণ ও গোলমরিচ: প্রোস্টেট, কোলন, এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে গোলমরিচ অত্যন্ত কার্যকর। গোলমরিচে থাকা পিপারিন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। গোলমরিচের সঙ্গে বিট লবণ খেলে এই সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

 

 

গোলমরিচ (Black Pepper) একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ, যা মূলত উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মে। এটি Piperaceae পরিবারের অন্তর্গত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Piper nigrum। গোলমরিচের চাষ পদ্ধতিটি বেশ সূক্ষ্ম এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করে এর চাষ করা হয়। নিচে গোলমরিচ চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. জলবায়ু ও মাটির ধরন:

গোলমরিচ চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। ১০০০-৩০০০ মিমি বৃষ্টিপাত যুক্ত এলাকায় এটি ভালোভাবে জন্মায়। তাপমাত্রা সাধারণত ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা উচিত। মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৬.৫ হওয়া ভালো। লাল মাটি, পলিমাটি বা দোআঁশ মাটিতে গোলমরিচ চাষ করা সবচেয়ে উপযোগী।

২. রোপণ ও জমি প্রস্তুতি:

গোলমরিচ মূলত লতার মতো বেড়ে ওঠে, তাই এটি চাষের জন্য মাচা বা সমর্থন প্রয়োজন। মাটি গভীরভাবে চাষ করে, ২-৩ টন জৈব সার মিশিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। এরপর ১.৫-২ মিটার দূরত্বে ছোট গর্ত করে গাছ রোপণ করা হয়। প্রতি গর্তে সাধারণত ২-৩টি করে চারা রোপণ করা হয়।

৩. চারা উৎপাদন:

গোলমরিচের চারা সাধারণত কাটিং থেকে উৎপাদিত হয়। কাটিংয়ের জন্য প্রায় ২-৩ বছরের পুরনো সুস্থ এবং রোগমুক্ত লতার কাণ্ড থেকে ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা কাটিং সংগ্রহ করা হয়। কাটিং সংগ্রহের পর, একে নার্সারিতে ৬-৮ সপ্তাহ ধরে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার পর মাঠে রোপণ করা হয়।

৪. সার প্রয়োগ:

গোলমরিচের ভালো উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি বছর ১০-১২ কেজি জৈব সার এবং ১.৫-২ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি ফসফেট এবং ১ কেজি পটাশ প্রয়োজন। সার প্রয়োগ করতে হবে চারা রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে।

৫. সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ:

গোলমরিচের চাষে নিয়মিত সেচ প্রয়োজন। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে সেচ নিশ্চিত করতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত না হয়।

৬. রোগবালাই ও প্রতিকার:

গোলমরিচ গাছে কিছু সাধারণ রোগ ও পোকামাকড় আক্রমণ করে, যেমন Anthracnose, Root Rot, Scale Insects ইত্যাদি। এদের প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও গাছের শাখা-প্রশাখা নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে।

৭. সংগ্রহ ও শুকানো:

গোলমরিচ ফল সাধারণত ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে। ফল যখন হালকা লাল হতে শুরু করে, তখন সেগুলি সংগ্রহ করা হয়। এরপর, ফলগুলোকে ৭-১০ দিন রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর, কালো গোলমরিচ তৈরি হয়।

৮. সংরক্ষণ:

শুকানো গোলমরিচ শীতল এবং শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হলে, গোলমরিচ দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকে।

এইভাবে গোলমরিচ চাষ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায় এবং এটি একটি লাভজনক ফসল হিসাবে বিবেচিত হয়।

 

আরো পড়ুন

কোন মাসে কোন সবজি ও ফল চাষ করবেন

অ্যাসিডিটির সমস্যায় সহজ ঘরোয়া টিপস