ভূমিকা:
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতে আদায় করা একটি বিশেষ নফল নামাজ যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন:
وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا “আর তারা যারা রাত কাটায় তাদের রবের উদ্দেশ্যে সিজদা ও দাঁড়িয়ে থেকে।” (সূরা আল-ফুরকান : 64)
এছাড়া, নবীজি (সা.) বলেছেন:
“ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।” (মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, আর এটি ইবাদতের বিশেষ মর্যাদা প্রদানের একটি মাধ্যম।
আমাদের কেন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে:
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অনেক সাওয়াব এবং বরকতের উৎস। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, “ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।” (মুসলিম)।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন:
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَادْبُرَ النَّجْمِ “আর রাতের কিছু সময় আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং নক্ষত্রের শেষে কিছু সময় কাটান।” (সূরা আল-ইসরা : 79)
এছাড়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’” (বুখারি, মুসলিম)
এই হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাহাজ্জুদ নামাজ শুধু ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ নয়, বরং এটি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকতের জন্য একটি মহান সুযোগ।
তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয়:
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা বা নিয়ম নেই। এটি অন্যান্য নামাজের মতোই আদায় করতে হয়। তবে, উত্তম হলো দীর্ঘ সুরা বা লম্বা কেরাত দিয়ে পড়া। নবীজি (সা.) সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে তা দিয়ে তাহাজ্জুত আদায় করা উচিত।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَادْبُرَ النَّجْمِ “আর রাতের কিছু সময় আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং নক্ষত্রের শেষে কিছু সময় কাটান।” (সূরা আল-ইসরা : 79)
হাদিসে এসেছে:
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা রাতের নামাজ আদায় করবে, তখন লম্বা কেরাত দিয়ে নামাজ পড়ো, কারণ এটি দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধারণে সহায়ক এবং তা পাঠের জন্য বেশি উত্তম।” (মুসলিম)
এছাড়া, নবীজি (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজের দীর্ঘ কেরাত সম্পর্কে বলেন:
إِنَّ أَطْوَلَ النَّاسِ صَلَاةً أَطْوَلُهُمْ قِرَاءَةً “যারা দীর্ঘ সময় নামাজ পড়ে, তারা দীর্ঘ কেরাত পাঠ করে।” (মুসলিম)
তাহাজ্জুদের সঠিক সময়:
তাহাজ্জুদ নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তবে, সর্বোত্তম সময় হলো শেষ রাতের শেষাংশ, যখন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا “আর কিছু অংশ রাতের তাহাজ্জুদ পড়ুন; এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত। আশা করা যায়, আপনার রব আপনাকে প্রশংসনীয় স্থানে উত্থাপন করবেন।” (সূরা আল-ইসরাঃ ৭৯)
হাদিসে এসেছে:
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’” (বুখারি, মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কী লাভ:
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ পড়া ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন, তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং তাঁর পাপ ক্ষমা করেন।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে বলেন:
وَمِنَ اللَّيْلِ فَصَلْهُ تَفْجِيرًا “এবং রাতের কিছু সময় আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করুন।” (সূরা আল-ইসরা : 79)
নবীজি (সা.) বলেছেন:
“তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী বান্দার দোয়া কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।” (মুসলিম)
এছাড়া, নবীজি (সা.) বলেন:
“প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’” (বুখারি, মুসলিম)
এইসব কুরআন ও হাদিসের আলোকে, তাহাজ্জুদ নামাজ শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায় নয়, বরং এটি মনের শান্তি, আল্লাহর অনুগ্রহ এবং ক্ষমার নিশ্চয়তা প্রদান করে।
উপসংহার: তাহাজ্জুদ নামাজ আমাদের ইমান বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদ নামাজের মর্যাদা বোঝার এবং নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
FAQ:
- তাহাজ্জুদ নামাজ কি শুধুমাত্র রাতে পড়া যায়?
- হ্যাঁ, তাহাজ্জুদ নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে, এটি রাতে আদায় করা উত্তম।
- তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষ সুরা কি আছে?
- তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই। তবে, দীর্ঘ সুরা বা লম্বা কেরাত দিয়ে পড়া উত্তম।
- তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়া যায়?
- অধিকাংশ স্কলারদের মতে, তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ আট রাকাত। নবীজি (সা.) কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন।
- তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি কিছু বিশেষ দোয়া করা যায়?
- হ্যাঁ, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আল্লাহর কাছে যেকোনো প্রার্থনা করা যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ পড়া ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন।
- তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কি?
- তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বান্দাদের আহ্বান করেন।
আরো পড়ুন
জানাজার নামাজের পদ্ধতি ও দোয়া: সহজবোধ্য ব্যাখ্যা